চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়নের খবর নতুন নয়। এবার দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশ বা পূর্ব তুর্কিস্তানে হান বংশীয় পুরুষদের আকৃষ্ট করতে উইঘুর নারীদের বিয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একে চীনের বহুল সমালোচিত এক সন্তান নীতির উত্তরাধিকার ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গণধর্ষণ বলে উল্লেখ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে উইঘুরদের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মুসলিম মানবাধিকার কর্মী রুশান আব্বাস। সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ডেইলি সিটিজেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশান আব্বাস এসব কথা বলেন।
গোটা বিষয়টি নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৯ সালে প্রথম এক সন্তান নীতির প্রয়োগ শুরু করে চীন সরকার। এ নীতি অনুযায়ী কোনো দম্পতি একটির বেশি সন্তান গ্রহণ করতে পারতেন না। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে চীনে নারী ও পুরুষের মধ্যকার মোট সংখ্যার অনুপাতে। যদিও ২০১৫ সালে চীন এই এক সন্তান নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। নতুন নীতি অনুযায়ী এখন দম্পতিদের অন্তত পক্ষে দুটি সন্তান নিতে উৎসাহ দেওয়া হয়। কিন্তু আগের নীতির ক্ষতিকর যে প্রভাব জনসংখ্যার ওপর
পড়েছে তা এত তাড়াতাড়ি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে চীনে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক পুরুষই বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। আবার পরিবারে নানা রকম নিয়ম নীতির কারণে মেয়েরাও অনেক পুরুষকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। ফলে অনেক পুরুষকে বাধ্য হয়েই আজীবন অবিবাহিত থেকে যেতে হচ্ছে। যা সমাজে গভীর এক সমস্যা তৈরি করছে।
বউ খোঁজার সামাজিক চাপে অনেক পুরুষ বিদেশি মেয়েদের দিকে ঝুঁকছে। ফলে আশপাশের দেশগুলো থেকে চীনে নারী পাচারের সংখ্যা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ইউনিভার্সিটি অব অ্যালবানির অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, কোনো দেশ থেকে একটি মেয়েকে চীনে নিয়ে আসতে সেখানকার পরিবারগুলো তিন থেকে তেরো হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করছে। এসব বিদেশি নারীর সঙ্গে যৌন দাসীর মতো আচরণ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি এড়াতে সহজ সমাধান হিসেবে উইঘুর মুসলিম নারীদের বেছে নিয়েছে চীন সরকার। হান পুরুষরা যেন বিদেশিদের বদলে উইঘুর নারীদের বিয়ে করে সে জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। লোভ দেখানো হচ্ছে নানা সুযোগ-সুবিধার।
রুশান আব্বাস বলেন, আগে থেকেই দেশে উইঘুর সংস্কৃতি ও ইসলাম ধর্মকে চিরতরে বিলোপের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে চীন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জিনজিয়াং প্রদেশে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির হান সদস্যদের উইঘুর পরিবারগুলোর কাছে পাঠানো হচ্ছে। এই হান পুরুষরা কিছুদিন ওই পরিবারের সঙ্গে থাকেন; যা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আসলে উইঘুর নারীদের গণধর্ষণের নামান্তর। যদিও সরকার একে সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক বন্ধন বিকাশের প্রচারাভিযান ‘জোড়া বাঁধুন, পরিবার গড়ে তুলুন’ নীতির অংশ হিসেবে দাবি করছে। আসলে বাস্তবে এটি উইঘুর পরিবারগুলোর ওপর নজর রাখার একটি উপায়। সেই সঙ্গে উইঘুরদের মধ্যে মদ্যপানসহ নানা হান সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ারও প্রচেষ্টা। যেসব ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী হারাম হিসেবে বিবেচিত।
রুশান আব্বাস বলেন, উইঘুর নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার। তাদের স্বামীদের কারাগার বা জোরপূর্বক শ্রম সুবিধা বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এর পর সেই নারী এবং উইঘুর তরুণীদেও বাধ্য করা হয় হান পুরুষদের বিয়ে করতে। মেয়েটি বা তাদের পরিবার প্রতিক্রিয়ার ভয়ে জোরপূর্বক এই বিয়ে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। কারণ এই বিয়েতে যদি তারা না বলে, তা হলে তাদের চিহ্নিত করা হবে ইসলামি চরমপন্থি হিসেবে। আবার হান পুরুষরা যেন উইঘুর নারীদের বিয়ে করে সে জন্য তাদের চাকরি, আবাসন এবং অর্থের লোভ দেখানো হয়।
এমন অবিচারের শিকার এক উইঘুর নারী উত্তর আমেরিকান গবেষকদের বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মেয়েই এখন হান পুরুষ বা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও তাদের আত্মীয় বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা এতে মত না দিলেও, এমন বিয়ে অনেক বেড়েছে।
Leave a Reply